শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০০ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক: মজা করে কেউ কেউ বলছেন, অর্থনীতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। ক্ষুধা লাগলো, ব্যাস নিজের উপার্জনের কয়েন বা ধাতব মুদ্রা খেলে নিলেন। তা পেটে যেয়ে আর হজমও হলোনা। আর কোনোদিন ক্ষুধাও লাগলো না। এতে সারা জীবনের জন্য আর্থিক সাশ্রয় হলো। ব্যাস, রাতারাতি ধনী।
কিন্তু এসব কথা শুধু মজা বা ফান করার জন্য বলা হচ্ছে। এর কারণে, ভারতের মধ্যপ্রদেশের মাকসুদ খান (২৮)। তিনি ওই প্রদেশের সাতটা জেলার একজন রিক্সাচালক। তার পাকস্থলি থেকে চিকিৎসকরা উদ্ধার করেছেন ১২ পাউন্ড বা ৫.৪৪ কেজি ধাতব পদার্থ। এর মধ্যে রয়েছে ধাতব মুদ্রা ও লম্বা তারকাঁটা। এ খবরে মুখে হাত দিয়ে বসেছেন সচেতন মানুষ। কি করে সম্ভব এসব জিনিস গলা দিয়ে নামানো! অনলাইন সিএনএন লিখেছে, ২৮ বছরের যুবক মাকসুদ পেটে ব্যথা নিয়ে ১৯ শে নভেম্বর ভতি হন মধ্যপ্রদেশের সঞ্জয় গান্ধী হাসপাতালে। তাকে দেখেই চিকিৎসকরা মনে করেন, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় ভুগছেন তিনি। ওই হাসপাতলের ডা. প্রিয়াঙ্কা শর্মা বলেন, এক মাস ধরে পেটে ব্যথার অভিযোগ করছিলেন মাকসুদ। প্রাথমিক পরীক্ষায় আমরা তার পেটে কিছুটা সংক্রমণ ও নিম্ন রক্তচাপ লক্ষ্য করি। এতে তার অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। এতে সংশয় দেখা দেয়, তার এর চেয়েও বড়, গুরুত্বর কিছু সমস্যা থাকতে পারে। ডা. প্রিয়াঙ্কা শর্মা আরও বলেন, তার পরিবার জানায় সে অস্বাভাবিক জিনিসপত্র খেতো। এতে আমাদের সন্দেহ হয়। ফলে আমরা তার একটি এক্স-রে এবং পেটের আলট্রাসাউন্ড করাই।
এতেই ধরা পড়ে তার পাকস্থলিতে অনেক ধাতব পদার্থ। এরমধ্যে আছে ধাতব মুদ্রা, তারকাঁটা, রেজরের ব্লেড প্রভৃতি। ফলে মাকসুদকে ২৪ শে নভেম্বর নেয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। এ সময় ল্যাপারোস্কোপ ব্যবহার করে তার পাকস্থলি থেকে বের করে আনা হয় এসব পদার্থ। ওই হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. এপিএস গহারওয়াল বলেন, অপারেশনে তার পাকস্থলিতে আমরা পেয়েছি নাট-বোল্টু, ২৬৩টি কয়েন, প্রায় ১০০ তারকাঁটা। তিন ঘন্টা সময় লেগেছে অপারেশনে। অপারেশনের পর ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত তাকে রাখা হয় ভেন্টিলেটরে। এ সময় তার অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। বর্তমানে তিনি বিপদমুক্ত। তবে তার পাকস্থলির ক্ষত সারতে আরো সময় লাগবে। ওদিকে তার মলদ্বারে আটকে আছে দু’ থেকে তিনটি কয়েন। এগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বের হয়ে আসবে।
অপারেশন পরবর্তী এক্সরে’তে চিকিৎসকরা দেখতে পেয়েছেন পাকস্থলিতে থাকা সব ধাতব পদার্থ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এরপরই তার পরিবারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন চিকিৎসকরা। তাদেরকে জানানো হয়, গভীর হতাশা থেকে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিয়েছিল মাকসুদের মধ্যে। ডা. শর্মা বলেন, এটা আসলে একটি মানসিক রোগ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের মনোবিজ্ঞান বিষয়ক বিভাগ দেখতে পেয়েছে তার হতাশাও ছিল। তবে সুস্থ হতে মাকসুদকে আরো চিকিৎসা নিতে হবে। তাতে অনেকটা সময় লাগতে পারে তার ক্ষত সারিয়ে তুলতে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালেও একই রকম এক ব্যক্তির সন্ধান মিলেছিল পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসরে। ৪২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি দু’মাস ধরে ধারালো ছুরি গিলে তারপর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অপারেশন করে চিকিৎসকরা তার পাকস্থলি থেকে বের করে আনেন ৪০টি ছুরি।